উচ্চতর ডিগ্রি (বিদেশ) – শিক্ষা ক্যাডার – শিক্ষাবৃত্তি (শুরু থেকে শুরু)


প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,  

সালাম ও শুভেচ্ছা। সবাই না, কিন্তু অনেকেই হয়ত স্বপ্ন দেখছেন- বিদেশী কোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করবেন। সেজন্য আইএলটিএস দিবেন ভাবছেন। কিন্তু আপনার মনে রয়েছে হরেক রকম প্রশ্ন। আমি শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছি, স্কলারশিপ পাব কী? অন্য ক্যাডারের কেউ আবেদন করলেই পেয়ে যায়, আমরা পাই না। হ্যাঁ, কথাটা আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। প্রমাণ- বিগত কয়েক বছরে শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই শিক্ষা-বৃত্তি সহ বিদেশি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি বা মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন বা অধ্যয়নরত আছেন। আমিও বর্তমানে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছি (২০২০-২০২১ সেশন)। (প্রশ্নগুলো আসলে একসময় আমার নিজের ছিল, শেয়ার করলাম)। আইএলটিএস-এ ৬.৫ বা তার চেয়ে বেশি পাব কী? কখন, কোথায় কীভাবে আবেদন করব, ইত্যাদি। কীভাবে পড়াশুনা করব, সময়তো পাইনা। দিনে অনেকগুলো ক্লাস নেই, পরীক্ষার খাতা দেখি, কমিটির কাজ করি ইত্যাদি। আবার অযথা সময়ও নষ্ট করি। কীভাবে সম্ভব! হঠাৎ ফেসবুকে দেখছেন যে ফেলোশিপ বা শিক্ষা বৃত্তির পরিপত্র (সার্কুলার) জারি হয়েছে। সার্কুলার পড়ে জানতে পারলেন যে আবেদনের একগাদা শর্ত। আনকন্ডিশনাল অফার লেটার লাগবে, এসওপি (SOP) লিখতে হবে, আইএলটিএস স্কোর লাগবে। আবার কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নিতে হবে। বুঝতে পারলেন আইএলটিএস দিতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে, আগে আইএলটিএস দিয়ে নেই, তারপর ভাবা যাবে। ভাবনা যদি এমন হয় তবে স্বপ্ন আপনার অঙ্কুরেই বিনাশ (আপনি ঘুমিয়ে গেলেন)। কিন্তু সেই স্বপ্নতো আপনাকে ঘুমাতে দিবে না, তাই না? হ্যাঁ, আর দেরি নয় তাই শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

 

এতক্ষণে হয়ত মনে আরেকটি প্রশ্ন জেগেছে, আর তা হল, তাহলে কীভাবে শুরু করব? কোনো কাজের শুরুতে কী যেন করে নিতে হয়? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, দৃঢ়-ইচ্ছা বা নিয়্যত বা স্বপ্ন দেখা ইত্যাদি। হ্যাঁ, শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিবেন- সে স্বপ্নতো দেখা শেষ। এরপর কী কাজ? এরপর যেটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল যথাযথ কর্ম-পরিকল্পনা। আর যথাযথ পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন বেসিক ইনফরমেশন। শুরুতেই সরকারি বৃত্তিগুলোর টাইমলাইনটা জেনে নেওয়া যাক। যেহেতু ইউকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেশন শুরু হয় প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে। খুব কমসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ছাড়াও জানুয়ারিতে সেশন শুরু হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন শুরু হয় মার্চে (কোর্স অনুযায়ী কিছু ভিন্নতা আছে)। প্রতি সেশনের অন্তত পাঁচ বা ছয় মাস আগেই শিক্ষা বৃত্তিগুলোর সার্কুলার হয়ে থাকে। সার্কুলার বৃত্তি-প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়ে থাকে (এই আর্টিকেলের শেষের দিকে কতিপয় শিক্ষা বৃত্তি-প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবলিংক সংযুক্ত করা আছে)। ইতোমধ্যেই জেনেছেন যে আবেদন প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণের জন্য একগাদা শর্ত/যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমে যেটা আসে তা হল আইএলটিএস স্কোর অর্জন। ধরে নিলাম আপনার আইএলটিএস স্কোর ৬.৫ বা তার বেশি আছে। পরের শর্ত হল- আনকন্ডিশনাল অফার লেটার (বিস্তারিত পরে আসছে)। এরপর আসবে এসওপি (SOP: Statement of Purpose)। এসওপি দুই ধরণের। যথা- (১) এসওপি ফর অফার লেটার (অফার লেটার সংগ্রহের জন্যে যে এসওপি লিখতে হয়) এবং (২) এসওপি ফর স্কলারশিপ (স্কলারশিপের জন্য আবেদনের সময় যে এসওপি লিখতে হয়)। এখন অনেক তথ্য আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে এখনো কনফিউজড। আইএলটিএস স্কোর হাতে নিয়ে তারপর শুরু করবেন, না এখনই শুরু করবেন। যদি এমন ভেবে থাকেন যে আইএলটিএস দিয়ে শুরু করবেন, তাহলে আমি বলব আপনি হাজার বছর (রুপক অর্থে) পিছিয়ে গেলেন। হ্যাঁ, এমনটি হলে আপনি অনেক বছর পিছিয়ে যাবেন।

 

আমি বলব এভাবে- ভারি বস্তা মাথায় নিতে পারছেন না। সমস্যা নেই, বস্তাটা অন্য কারোও মাথার উপর দিন আর আপনি সামনে থেকে নির্দেশনা দিন। হ্যাঁ, আইএলটিএস বাদে বাকি কাজগুলো অন্যকারোও উপর ছেড়ে দিন না! আমি মিডিয়া বা এজেন্টের কথা বলছি। আমাদের দেশে অনেক এজেন্ট আছে যারা ইউকে বা অস্ট্রোলিয়ার অনেক বিখ্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। তাদের কাজ হল “অফার-লেটার টু ভিসা”। এমনকি এয়ার টিকিটটা পর্যন্ত তারা কিনে দিবে (অবশ্য ফেয়ারটা আপনাকে পে করতে হবে)। “অফার-লেটার টু ভিসা”- মানে হল এজেন্ট প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের একটি চেক লিস্ট দিবে। চেক লিস্ট অনুযায়ী আপনি ডকুমেন্টস দিলে আপনাকে তারা এসওপি লিখতে সাহায্যে করবে। এরপর অফার লেটার সংগ্রহ করার জন্য তারা আপনার মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবে, অফার লেটার এনে দিবে। আইএলটিএস স্কোর সহ আপনি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন। ধরুন আপনি স্কলারশিপ পেলেন (আপনি অবশ্যই পাবেন ইনশাআল্লাহ), এজেন্ট আপনার ভিসা এপ্লিকেশন করে দিবে, ভিসা হয়ে গেলে আপনার এয়ার টিকিট ক্রয় করে দিবে (যদি আপনি চান), বিদেশে যাবার পর এডমিশনে কোনো সমস্যা হলে তারা আপনাকে সহায়তা করবে ইত্যাদি। আর এতগুলো কাজ তারা করে দিবে বিনে পয়সায়। একারণে যে বিনিময়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিশন পাবে। এমনকি আইএলটিএস স্কোর ছাড়াও তারা অফার লেটার এনে দিতে পারে। এ ধরণের অফার লেটারকে কন্ডিশনাল অফার লেটার বলে। পরে আইএলটিএস সার্টিফিকেট সাবমিট করে কন্ডিশনাল অফার লেটার কে আনকন্ডিশনাল অফার লেটারে রুপান্তর করা যায়। সারাংশ হল সবগুলো কাজ একসাথে চলবে। একদিকে যেমন আপনি আইএলটিএস দিবেন অন্যদিকে এজেন্ট/মিডিয়া বাকি কাজ গুলো এগিয়ে নিবে। সেজন্য আপনাকে একটা নিজস্ব টাইমলাইন সেট করে নিতে হবে। সেটা হতে পারে এরকম।

অফার লেটার সংগ্রহের ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হল বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং, নির্বাচিত কোর্স/বিষয়, লোকেশন/কান্ট্রি সিলেকশন। র‍্যাংকিং এ উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা যুক্তি সংগত কারণ চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে র‍্যাংকিং এর ভার বেশি মানে নম্বর বেশি থাকে। র‍্যাংকিং ছাড়াও আইএলটিএস,  এসওপি যা কর্ম বা পেশা এবং এসডিজি গোলের সাথে কতটা সংগতিপূর্ণ তার উপর ভিত্তি করে কিছু নম্বর, একাডেমিক রেজাল্টের উপর নম্বর এবং প্রায় অর্ধেক নম্বর মৌখিক পরীক্ষায় থাকে। কোর্স সিলেকশনের ক্ষেত্রে এসডিজি গোল অর্জনে কার্যকরী ভূমিকা রাখে এমন বিষয় বা কোর্সকে জোর দিতে হবে যদিও তা আপনার মাদার সাবজেক্ট বা মেজর সাবজেক্টের সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকে তবে অবশ্যই আপনার বর্তমান পেশার সাথে সংগতিপূর্ণ যেন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন শিক্ষা ক্যাডারের ক্ষেত্রে এসডিজি গোল-৪ (কোয়ালিটি এডুকেশন)। অবশ্যই বিষয়/কোর্স ভেদে এসডিজি গোলের ভিন্নতা থাকবে, তবে এসডিজি-৪ সবার জন্য কমন। নম্বর বিভাজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পিএম ফেলোশিপ কর্তৃক প্রকাশিত “ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চন” বা FAQ নামের পিডিএফ ফাইলটি পড়ে নিতে পারেন।  

 

মনে মনে আবার ভাবছেন, এত্ত কিছু!!! আপনি আবার ভুল বুঝলেন। এত্ত কিছু কিন্তু একদিনে বা একমাসে করতে হবে না। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে কম-বেশি এক বছরের মধ্যে। জয়-পরাজয় এর উপর নজর না দিয়ে আপনি ম্যাচ টু ম্যাচ খেলে যান। বিজয় আপনার কাছে এমনি ধরা দিবে যা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি (ইনশাআল্লাহ)। স্কলারশিপের সার্কুলার নিচের লিংকগুলোর দিকে চোখ রাখুন। মাঝে মধ্যে ভিজিট করুন। ভয় নেই, সোস্যাল মিডিয়ায় পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই।

কতিপয় স্কলারশিপ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের ওয়েবলিংক।

১। জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক মাস্টার্স যার অন্য নাম স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট

২। প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ বা পিএম ফেলোশিপ

৩। বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ

৪। চীন সরকারের শিক্ষাবৃত্তি (সার্কুলার জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়)

৫। জেডিএস শিক্ষাবৃত্তি (সার্কুলার জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়) অথবা,

JDS Bangladeshএই ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে।

 

৬। কমনওয়েলথ শিক্ষাবৃত্তি ইউজিসি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত

৭। কমনওয়েলথ শেয়ারড স্কলারশিপ ইউকে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত

৮। কুইন এলিযাবেথ কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (মনোনীত ইউনিভার্সিটি ডেভলভিং কান্ট্রিতে অবস্থিত)

৯। শেভেনিং স্কলারশিপ

১০। অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপ

বাংলাদেশ সরকার/সংস্থা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত সকল শিক্ষাবৃত্তির সার্কুলার দেখতে নিচের লিংক ভিজিট করুন।

শিক্ষাবৃত্তি বিজ্ঞপ্তি

লেখক-

মোঃ দেলোয়ার হোসেন, প্রভাষক পদার্থবিদ্যা

বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাউশি

এমএসসি রিনিউবল এনার্জি এন্ড ক্লিন টেকনোলজি, দ্যা ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার, ইউকে (অধ্যয়নরত- সেশন ২০২০-২০২১) (প্রেষণ)

 

16 responses to “উচ্চতর ডিগ্রি (বিদেশ) – শিক্ষা ক্যাডার – শিক্ষাবৃত্তি (শুরু থেকে শুরু)”

  1. Rajia Akther says:

    Very helpfull writting that gives both courage and interest.

  2. Salma says:

    Helpful Asthetic documentary. Good.

  3. Mohammad Jashim Uddin says:

    খুব ভালো লাগলো, ধন্যবাদ।

  4. Tanzila Siddiquea says:

    Thank you so much sir..it is really very helpful..

  5. Md Nazrul Islam says:

    I want to know more about foreign MS programme.

  6. Md.Muzahidur Rahman says:

    Thanks a lot sir for your inspiring and motivational speech.I am requesting you to write about agent/media.How will we contact with agent and how much would be the charge?Thanks again Sir.

  7. Sheikh Farid says:

    Please Mention the name of the concerned media……..

  8. Thank you so much sir for sharing your own complement with reader’s . In my view of point this will be very helpful for everybody who will read this content a to z.

    Tarajul Islam

  9. Rajib Das says:

    Thank you for this helpful writing. But still I am a little bit about these lines “আমাদের দেশে অনেক এজেন্ট আছে যারা ইউকে বা অস্ট্রোলিয়ার অনেক বিখ্যত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। তাদের কাজ হল “অফার-লেটার টু ভিসা”।”
    এজেন্ট সিলেকশনের ব্যাপারে কিভাবে আগানো উচিত? ইউনিভার্সিটির পেইজ থেকে খুঁজে নিতে হবে কি?

    • ppidelowar says:

      Yes, You can find out the agent names on your desired University Websites. If you fail, let me know. My UK Contact No: +447404639075

  10. Rajib Das says:

    এই বিষয়ে আরও কন্টেন্ট বানান স্যার।

  11. Md Delowar says:

    চেষ্টা করব।

  12. Maksuda Akter says:

    Thanks for informative and inspiring writing.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *