শিক্ষক কখন শেখাতে পারে? একটি গল্প


উত্তর জানার আগে চলুন তাহলে একটি গল্প শোনা যাক। গল্পটি হল স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী এবং তার গণিতের গৃহ শিক্ষককে নিয়ে। আলোচ্য স্কুল পড়ুয়া ছেলে বা মেয়েটি গণিতে কাচা। তার বাবা-মা তাকে অংক শেখানোর জন্য কত চেষ্টাই না করলেন। কখনো বা স্কুল আবার কখনো বা গৃহশিক্ষক বদলিয়ে চেষ্টা করলেন। কোনো ভাবেই তার অংক উন্নতি হচ্ছে না। এইবার পারিবারিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন দক্ষ গণিতের শিক্ষক খুঁজে বের করার ভার পড়ল ঐ শিক্ষার্থীর মামার উপর। মামা অনেক খোঁজা-খুজি করে নিয়ে আসলেন একজন গণিতের শিক্ষককে। নির্দিষ্ট দিনে শিক্ষার্থীর সাথে গণিত-শিক্ষকের পরিচয় হল। মামা পরিচয় পর্ব শেষ করে ঘর বের হয়ে গেলেন।

মামা চলে যাবার পর গণিত শিক্ষক বললেন, “বাবা দরজাটা বন্ধ করে দাও তো? ছাত্র গণিতে দুর্বল হলেও মানুষ হিসেবে ভাল। সাথে সাথে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষকের পাশে এসে বসল। শিক্ষক এবার শিক্ষার্থীর হাত ধরে করুণ সুরে বললেন, “বাবা আমাকে বাচাও!!!” শিক্ষার্থী অবাক। কত স্যার আসলেন, আবার চলে গেলেন। কেউ কখনো তাকে এভাবে অনুরোধ করেনি। শিক্ষার্থী নানা অজনা বিষয় নিয়ে কল্পনা করছে …। শিক্ষক আবার বললেন, “বাবা, আমিও গণিতে কাঁচা। কিন্তু টিউশনি আমার খুবই দরকার। আমি খুবই আর্থিক সংকটে আছি। আমাকে বাচাও বাবা।” শিক্ষার্থী ভাবছে- হায় আমার পোড়া কপাল। এবার বুঝি “ফেল-ই মানেনা আবার পাশ।” স্কুলের বাংলা স্যারের কাছে শোনা গল্প তার মনে পড়ে গেল, গল্পের শিরোনাম হল “ফেলি …… আবার পাশ।” গল্পটি অন্য কোনো দিন শুনব, আজ নয়। শিক্ষার্থী জবাবে কী উত্তর দিবে তা ভাবছে। স্যার আবার বলে উঠলেন, “কয়েকটা মাস একটু চেষ্টা করে শুধু অংকে পাশটা কর বাবা। তিন-চার মাসের টিউশনির টাকা পেলে আমার আর্থিক সংকট কিছুটা কেটে যাবে। এরপর আমি তখন এমনি এমনি চলে যাব।” স্যারের কষ্টের কথা চিন্তা করে শিক্ষার্থী স্যারকে কথা দিলেন এবং বললেন, “স্যার, ঠিক আছে। আমি চেষ্টা করব।” ঐদিন স্যার চলে গেলেন। শিক্ষার্থী এবার উঠেপড়ে লেগে গেল তার স্যার কে বাচানোর জন্য। কখনো বা তার বন্ধুর কাছে, কখনো স্কুলের ক্লাস শেষে স্যারের কাছে অতিরিক্ত সময় দিয়ে অংক শেখার চেষ্টা করতে থাকল। গৃহশিক্ষক প্রতিদিন আসে, খবর নেয় তার শিক্ষার্থী কতদূর শিখল, কীভাবে শিখল ইত্যাদি। প্রতিদিন নানা ভাবে তাকে উৎসাহ দিতে থাকেন। কখনো কখনো তার কাছে অংকের কিছু নিয়ম বুঝতে চান। শিক্ষার্থী স্যারকে বুঝিয়ে দেয় আর মনে মনে ভাবে সে তার স্যারকে হেল্প করছে। এই ভেবে তার অংক শেখার গতি আরও কয়েক গুণে বেড়ে যায়। যাইহোক, স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী অংকে পাশ করল। এবার বাবা মা অনেক খুশি। শিক্ষার্থীকে দেওয়া কথামত স্যার অভিভাবকের কাছ থেকে বিদায় চাইলেন। বললেন, “এবার আমি বিদায় নিতে চাই। আমার কাজ শেষ।” কিন্তু অভিভাবক নারাজ, এই স্যারকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। তারা বেতন বাড়িয়ে দিয়ে স্যারকে ঐ বৎসর পুরোটাজুড়ে পড়ানোর অনুরোধ করলেন। স্যারও অবশেষে রাজি হলেন। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরও স্যারের প্রতি আলাদা টান সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীও চাইছে স্যার তাকে পড়াক। স্যার পড়ালেন, শিক্ষার্থীও বার্ষিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত নম্বর পেল। গল্পের শেষের দিকে স্যার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শায়িত। শিক্ষার্থীকে খবর পাঠালেন তাকে শেষবারের মত দেখার জন্য। শিক্ষার্থীক হাসপাতালে আসলে স্যার তাকে একটি ব্যাগ দিলেন। শিক্ষার্থী হাতে নিয়ে দেখলেন স্যার প্রতিদিন এই ব্যাগ নিয়েই তাকে পড়াতে আসতেন। স্যারের দিকে তাকালে স্যার ইশারা দিলেন ব্যাগ না খোলার জন্য। ঘটনাক্রমে স্যার হাসপাতালে ইন্তেকেল করলেন। শিক্ষার্থী ব্যাগ খুলে দেখলেন একটি চিঠি আর গণিত বিষয়ের উপর স্যারের কিছু কালজয়ী গবেষণাপত্র। আর ঐ চিঠিটিতে লেখা “আমার অসমাপ্ত গবেষণাটি শেষ করার অনুরোধ রইল।” শিক্ষক তখনই শেখাতে পারে যখন কেউ শিখতে চায়। শিক্ষকের কী কাজ? শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য তার জানার স্পৃহাকে শাণিত করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।

5 responses to “শিক্ষক কখন শেখাতে পারে? একটি গল্প”

  1. Salma says:

    An exclusive fiction

  2. Masruk Jim says:

    আসসালামুয়ালাইকুম স্যার,
    বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় শিক্ষার্থীদের করনীয় কী? তারওপর এক আর্টিকেল চাচ্ছি আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা সবাই ভাল গ্রেডের পিছনে ছুটিছি। পদার্থ বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মত মজাদার বিষয় গুলোও যেন তেতো হয়ে আছে আমাদের কাছে। কেউ শেখার জন্য পড়তেছি নাহ শুধু গ্রেডের জন্য!

  3. Tanzila Siddiquea says:

    outstanding sir ❤️❤️

  4. Farzana Akter Ripa says:

    very nice and wonderful story

  5. ZAhid says:

    Real Teacher.

Leave a Reply

Your email address will not be published.