ভবিষ্যতের এক কাল্পনিক সকাল
আজ সোমবার। ভোর বেলায় ইলেকট্রন সাহেব ঘুমাচ্ছেন। প্রাইভেট কারের লো-ব্যাটারির সাইরেন সিগন্যালে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে তার স্মার্ট ফোনে পচিশটি নোটিফিকেশন দেখতে পান। প্রথমটি ছিল ভোর পাঁচটায় এবং সর্বশেষ নোটিফিকেশন সকাল সাতটার। সর্বশেষ নোটিফিকেশনটি পড়লেন-
Dear Customer, Your Car battery is deeply discharging. Charge status is 20%. To stop please write ‘STOP’ and send to 555. Thanks.
বুঝতে বাকি রইলা না যে রাতে ঘুমানোর পূর্বে কার ব্যাটারির ডিসচার্জিং রেগুলেটরে সর্বনিম্ন সীমা ৫০% করতে ভুলে গিয়েছিলেন। সেকারণে কার-ব্যাটারি জাতীয় গ্রিডে চার্জ দিচ্ছে এবং ১০% না হওয়া পর্যন্ত সেটি চলতে থাকবে। তড়িঘড়ি করে মেসেজ পাঠিয়ে সেটি বন্ধ করলেন। GreenCar অ্যাপে বিলিং আইকনে ক্লিক করে দেখতে পেলেন যে আজ রাতে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারণে ৫৫ টাকা ক্যাশ ব্যাক পেয়েছেন। সাধারণত প্রতিরাতে ২০ থেকে ৩০ টাকার মত ক্যাশ ব্যাক পেয়ে থাকেন কিন্তু আজ রাতে ক্যাশ ব্যাক পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। ইউটিউবে ঐ বিজ্ঞাপনের কথা মনে পড়ে গেল, বিজ্ঞাপনে কোনো স্টার বলেছিলেন- More Discharge, More income. ক্যাশব্যাক পেয়ে মুখে হাসির ভাব আসতেই তার মনে পড়ে গেল আজ তার এক ঘণ্টা আগে অফিসে যেতে হবে, মিটিং এর প্রস্তুতি নিতে হবে। হাতে আছে মাত্র ৫০ মিনিট। কিন্তু এতো অল্প সময়ে কার-ব্যাটারি চার্জড হবে তো?!
ইতোমধ্যেই ব্যাটারি চার্জ নিতে শুরু করেছে। চার্জ-টাইমিং বার আইকনে দেখতে পেলেন ৫০% চার্জ হতে তার ৩০ মিনিট সময় লাগবে। সম্প্রতি তিনি তার কারে ফার্স্ট-চার্জিং চার্জার লাগিয়ে নিয়েছেন। কালক্ষেপন না করে ওয়াশরুমে ঢুকলেন। রেডিয়েশন ক্লিনিং সিস্টেম ব্যবহার করে দাত মাজলেন, শেইভ করে বের হয়ে আসলেন। বের হয়ে আসতে দেখতে পেলেন রোবট তার নাস্তা রেডি করে ডাইনিং টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলের উপর রুটি আর গোশত ভুনা। কিন্তু গোশত ভুনা তার খেতে মন চাচ্ছে না। স্মার্ট-ফুড অ্যাপ থেকে জানতে পারলেন ফ্রিজে ভেজিটেবল-কারি আছে। নতুন করে ভেজিটেবল-কারি রিপ্লেসমেন্ট উইথ গোশত ভুনা সিলেক্ট করলেন। রোবট রিপ্লেস করে দিল। নাস্তা শেষে বেরিয়ে পড়তে হবে। ড্রেসিং রুমে ঢুকে দেখতে পেলেন, আজকের ড্রেস-প্যাক রেডি। কী কী পড়বেন, আলমারি থেকে নির্বাচন করার দ্বিধায় পড়তে হল না। ড্রেস-আপ শেষে বের হবেন এমন সময় মনে হল যে তার হোম-পাওয়ার হাউজের সর্বশেষ অবস্থা চেক করা দরকার। পাওয়ার হাউজের দিকে হাটা শুরু করেও ফিরে এসে গাড়িতে উঠলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন যে গাড়িতে বসে তিনি অ্যাপের মাধ্যমে চেক করবেন।
কার স্টার্ট করার পূর্বে স্মার্ট-কার রাইডিং অ্যাপে ডিস্টিনেশন সিলেক্ট করলেন এবং সেই সাথে ম্যাক্স-স্পিড ৫০কিমি/ঘন্টা সিলেক্ট করলেন এবং পৌছানোর সম্ভাব্য সময় ১৫ মিনিট দেখতে পেলেন। গাড়ি অটো চলতে থাকল, হাইলেভেল আর্টিফিসাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গাড়ি অটো মুভ করতে থাকল। কয়েক মিনিট চলার পর রেড সিগন্যালে গাড়ি অটো থেমে গেল। অ্যাপে অটো মেসেজ আসল, Dear Passenger, Road is closed temporarily due to VIP Access. Please wait around 5 mins. Sorry for the inconvenience.
এই সুযোগে স্মার্ট-হোম-পাওয়ার অ্যাপে তার নিজস্ব হোম-সোলার পাওয়ার প্লান্টের পাওয়ার প্রোডাকশন স্ট্যাটাস চেক করা শুরু করলেন। তিনি দেখলেন গত ২৪ ঘণ্টায় হোম-পাওয়ার-প্লান্ট ৫০ কিলোওয়াট ইলেক্ট্রিসিটি গ্রিডে সাপ্লাই করেছে এবং গ্রিড থেকে ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ গ্রহণ করেছে। ৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ২৫ কিলোওয়াট রাতের বেলা গ্রহণ করেছেন। নেট প্রোডাকশন ২০ কিলোওয়াট। নেট ইনকাম ১০০ টাকা। ১০০ টাকা ইতোমধ্যেই তার একাউন্টে জমা হয়েছে। তিনি অবাক হলেন। গতকাল প্রায় সারাদিনই বৃষ্টি হয়েছিল একারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ তার মনে পড়ল সম্প্রতি তিনি কিছু পাওয়ার প্যানেল স্থাপন করেছেন যেগুলো মেকানিকেল এনার্জি যেমন বৃষ্টির ফোটার আঘাত, ঝড়ো বাতাসের প্রভাবকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। একারণে বৃষ্টির দিনেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে কমতি হয় নাই।
ইলেকট্রন সাহেব ঘড়ির দিকে তাকালেন। গ্রিন সিগন্যাল পেতে আরোও তিন মিনিট বাকি আছে। মনে মনে বিরক্তির ছাপ আসতেই খেয়াল করলেন যে সিগন্যাল চেঞ্জ হচ্ছে এবং গাড়ি চলতে শুরু করেছে। তার গাড়ি যখন ক্রসিং পাস করছিল তিনি দেখলেন তার গাড়ির উপর দিয়ে ভিআইপি গাড়ি বহর ফ্লাইং করে চলে যাচ্ছে। একারণে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই লাইন ক্লিয়ার হয়েছে। গাড়ি চলছে এখন সর্বোচ্চ ৫০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে। এই গতিতে চললে অফিসে পৌছতে তার আরও ৮ মিনিট লাগবে। পার্কিং শেষে অফিস পৌছতে আরও অতিরীক্ত কিছু সময় লাগবে। একারণে অ্যাপের মাধ্যমে ডিস্টিনেশনে পৌছার প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সময় ৩ মিনিট করে দিলেন। যার ফলে গাড়ির গতি কিছুটা বৃদ্ধি পেল।
গাড়ির কন্ট্রোল ডিস্প্লেতে নোটিফিকেশন আসল। মেসেজ পড়ে বুঝতে পারলেন যে তার বাসার হোম চার্জিং সিস্টেমের সাথে কার ব্যাটারির ওয়ারলেস কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়েছে কারণ গাড়ি তার নির্দিষ্ট সর্বোচ্চ-দূরত্ব সীমা অতিক্রম করেছে। একই সাথে নিকটবর্তী অপর একটি ওয়ারলেস চার্জিং সিস্টেমের সাথে কানেক্ট করার জন্য অনুমতি চাচ্ছে। কার-ব্যাটারি ৫০% এর বেশি চার্জড হওয়ায় তিনি সেটি গ্রহণ করলেন না। নির্ধারিত সময়ের মিনিট খানেক আগেই অফিসে পৌছে গেলেন। অফিসের মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই লক্ষ্য করলেন যে সেখানে তার অফিসের কর্মচারীদের একটি ছোটখাট জটলা, সবার মুখে হাসি, একজনের হাতে ফুলের তোড়া। ইলেকট্রন সাহেব ক্যালেন্ডারে তারিখ চেক করে নিশ্চিত হলেন তার আজ জন্মদিন নয়। তাহলে কিসের এই জটলা? জটলার কাছে পৌছতেই পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট ইলেকট্রন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বললেন, অভিনন্দন স্যার! ইলেকট্রন সাহেব কিছু না বুঝেই বললেন, ধন্যবাদ, কিন্তু কেন? এসিস্ট্যান্ট বললেন, স্যার, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হতে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় এ বছর আমাদের কোম্পানি Green Energy for Lives 2050 পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
ইলেকট্রন সাহেব উপস্থিত ছোটখাট একটি বক্তব্য দিলেন এবং সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস রুমের দিকে হাটতে থাকলেন। উল্লেখ্য, অফিসে অবস্থানরত অবস্থায় স্মার্ট ফোনে থাকা অ্যাপগুলো থেকে কোনো ধরণের নোটিফিকেশন বা মেসেজ আসে নাই, কারণ সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সেই অ্যাপগুলো মেসেজ অ্যালার্ট ডিসেবল করা থাকে।
লেখক
মোঃ দেলোয়ার হোসেন, প্রভাষক, পদার্থবিদ্যা
ওএসডি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা।
ভাল লিখেছেন প্রিয় স্যার।
ধন্যবাদ।