একটি যুগ-পরিবর্তনকারীর রম্য-আত্ব-কাহিনী


আমার নাম ………। মোবাইলের চার্জার ভেঙ্গে গেলে আমাকে দেখেছেন হয়ত অনেকেই। বঙ্গানুবাদ করলে আমার নামের অর্থ দাঁড়ায় ‘একমুখীকারক’। সহজ কথায় হল আমি দুমুখো সাপের মত নই। চোগলখুরী স্বভাব আমার মধ্যে নেই। অন্য ভাষায় আমার ব্যবহার অনেকটা ওয়ান-ওয়ে রোডের মত। গাড়ি কেবল রাস্তার একমুখ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যমুখ দিয়ে চলে যাবে-এটাই আমার ভাল্লাগে। “বিপরীতমুখী হয়ে গাড়ি চলবে” সেটা তো দূরের কথা আমি বিপরীত মুখ দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করতেই দেই না। তবে উপরের নির্দেশ থাকলে ভিন্ন কথা। কঠোর নির্দেশ থাকলেই কেবলমাত্র তা সম্ভব। একারণে যে কোনো ধরণের ব্যাটারির সাথে আমার ভাল খাতির (সু সম্পর্ক) আছে। কারণ ব্যাটারিতে খাবার সাপ্লাই দেওয়াই আমার প্রধান কাজ। ব্যাটারি আবার নিরামিষ এবং শাকসবজিও খায় না। খায় শুধু কেমিক্যাল। ব্যাটারির পাকস্থলিতে এসিড থাকে। এসিডের মধ্যে ভাসমান দুটি পিলার থাকে। যেকোনো একটি পিলারের মধ্যে ইলেকট্রন পৌছে দেওয়াই আমার কাজ। এজন্য আমাকে 220ভোল্ট-50হার্জ বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে লেগে থাকতে হয়। আগেই বলেছি, আমার নাম একমুখীকারক। বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যখন ইলেকট্রন আমার মধ্য দিয়ে ব্যাটারিতে যায়, আমি শুধু তদারকি করি ইলেকট্রন একদিকে যাচ্ছে কীনা!! যদি না যায় (বিপরীত দিকে গেলে) আমি তারে থাপরায়ে ফেরত পাঠাই। ইলেকট্রনকে থাপরাইতে আমার বড় ভাল লাগে।  

সিলিকন ভ্যালেতে আমার বসবাস। জার্মেনিয়াম ভ্যালেতেও আমাকে খুজে পাবেন। অ্যালুমিনিয়াম আমার বাবা। আমার দাদা আদিম মানুষ। মরুভূমিতে দাদার নাকি বসবাস ছিল। সে যাইহোক-আমার চাচার সংখ্যা অনেক। নামগুলো মনে থাকে না। তবে যারা আমার খোজ-খবর নেয় তাদের কথা মনে থাকে। এই যেমন- বোরণ, আর্সেনিক, ফসফরাস, নাইট্রোজেন চাচার কথা বেশি মনে থাকে।  

AmazonHeadphones

জীবনের কোনো এক পর্যায়ে আমি আমাকে সিলিকন ভ্যালের কোনো এক জাংশনে খুজে পাই। জাংশনটির নাম ‘পি-এন’। ‘পি’ তৈরী হয় সিলিকন-অ্যালুমিনিয়াম থেকে আর ‘এন’ আসে সিলিকন-নাইট্রোজেন থেকে। জাংশন তৈরীর পূর্বের কাহিনী অন্যদিন বলব। সে এক বিরাট ইতিহাস। তো যাইহোক, প্রথমদিকে জাংশনের মধ্যে ইলেকট্রনের সংখ্যার বৈষম্য থাকে। ‘এন’ অংশে ইলেকট্রন বেশি থাকে। ‘পি’ অংশে ইলেকট্রনের ফ্রেন্ড থাকে তাদের নাম ‘হোল’। ইলেকট্রন সুযোগ পেলেই ‘পি’ তে চলে যেতে চায় তার ফ্রেন্ডের সাথে মিলিত হতে। জাংশনের খুব নিকটে অবস্থিত ইলেকট্রন গুলো সেই সুযোগ নেয় এবং ফ্রেন্ডের সাথে মিলিত হয়ে কিছু এলাকা ব্লক করে দেয়। ব্লককৃত এলাকার একটা বিশেষ নাম আছে সেটি হল নিঃশেষিত অঞ্চল (ডিপ্লেশন রিজিওন)। মানে ইলেকট্রন ফ্রেন্ডের সাথে মিলিত হয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে। তো যাই হোক, এই নিঃশেষিত অঞ্চল পরবর্তীতে আর কোনো ইলেকট্রন চলাচল করতে দেয় না। দেয় না বললে ভুল হবে। বল প্রয়োগ ছাড়া চলাচল করতে দেয়ে না। তবে শর্ত আছে। শর্তটি হল।

‘এন’ হতে ‘পি’ এর দিকে ইলেকট্রন চলতে দিবে কিন্তু পি হতে এন এর দিকে ইলেকট্রন চলতে দিবে না। নিঃশেষিত অঞ্চলের দুটি ভাগ থাকে। একটি ভাগ ‘এন’ অংশের অপরটি ‘পি’ এর। ‘এন’ থেকে ইলেকট্রন চলে গেছে ‘পি’ তে। তাই ইলেকট্রন হারানোর দুঃখে ‘এন’ পজিটিভ আর ‘পি’ ইলেকট্রন গ্রহণ করেছে তাই ‘পি’ অংশটি নেগেটিভ এ পরিণত হয়। জাংশনের এই অংশে দুই ধরণের চার্জ থাকায় এখানে একটি ‘বিভব প্রাচীর’ তৈরী হয়। সত্যি বলতে কী! এই বিভব প্রাচীরের নিচে যে বসবাস করে তিনি আর কেউ নন। আমিই সেই সভ্যতা পরিবর্তনকারী ……. । ইলেকট্রনিকস জগতে আমার বহুল বিচরণ। মানে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসএপ যত ডিজিটাল সোস্যাল জগত আছে সকলের টিকে থাকার পিছনে আমার প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে। সেদিকে যাচ্ছি না। আমার মরণ সহজে আসে না। আমি করোনা ভাইরাসকেও ভয় পাই না।  তবে আমার ভিতরদিয়ে ইলেকট্রন চলাচল করার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে, সেই মাত্রা অতিক্রম করলে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। আমি মরে যাই। ইলেকট্রনের সংখ্যার সেই মাত্রাটি (ওয়াট) আমার গায়ে লেখা থাকে। আমাকে ব্যবহার করতে চাইলে দয়া করে সেই মাত্রাটি একবার ভালভাবে দেখে নিবেন প্লিজ। আমি মরতে চাই না। এই সুন্দর পৃথিবীকে আমি আরও আনন্দময় করতে চাই। সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।

প্রিয় পাঠক, বলুন তো আমি কে? দয়া করে কমেন্টে আমার ইংরেজি নামটি লিখুন।

ধন্যবাদ।

লেখক

মোঃ দেলোয়ার হোসেন

প্রভাষক, পদার্থবিদ্যা

ওএসডি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা।

6 responses to “একটি যুগ-পরিবর্তনকারীর রম্য-আত্ব-কাহিনী”

  1. Surja Kanta Paul says:

    Diode

  2. ppidelowar says:

    ঠিক বলেছে বন্ধু।

  3. Abu Huzaifa says:

    স্যার,উদ্দীপকে আপনার নাম যাইহোক, আপনার সৃজনশীল চিন্তা আর বুদ্ধিদীপ্ত লিখনিই আমাদের জন্য শিক্ষা। খুব ভাল লেগেছে💝। খুব ভাল থাকবেন দেশের বাইরে🥰

  4. Rikta says:

    স্যার,অসাধারণ লেখনি আপনার। শিখার সহজ কৌশল। স্যার রেক্টিফায়ার হবে কি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *