কঠিনের ব্যান্ড তত্ত্ব
১। ব্যান্ড তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?
ব্যান্ড মানে গুচ্ছ, এটা আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে সলিডের ব্যান্ড তত্ত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ব্যান্ড তত্ত্বের সংজ্ঞা দেওয়ার আগে একটি উদাহরণ দেখে নেই।
সোডিয়াম একটি ধাতব পদার্থ। এটি একটি কঠিন পদার্থ এবং দানাদার বা ক্যালাস। আলোচনার সুবিধার্থে ধরি, একটি সোডিয়াম ক্যালাসে বা এক খন্ড সোডিয়ামে এক কোটি সোডিয়াম পরমাণু আছে। একটি সোডিয়াম পরমাণুর বহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটি ইলেকট্রন বিদ্যমান। তাহলে ঐ সোডিয়াম ক্যালাসে পরমাণুগুলোর বহিঃস্থ শক্তিস্তরে সর্বমোট এক কোটি ইলেকট্রন বিদ্যমান। ব্যান্ড তত্ত্ব বুঝার আগে মনে হবে যে এক কোটি ইলেকট্রন একটি মাত্র শক্তিস্তরে ঘূর্ণায়মান আছে অথবা এককোটি ইলেকট্রনের সবগুলোর শক্তি একই। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। বহিঃস্থ শক্তিস্তর এককোটি শক্তিস্তরে বিশ্লেষিত হয় বা এও বলা যায় যা এককোটি ইলেকট্রনের শক্তিমানের মধ্যে অতিক্ষুদ্র পার্থক্য থাকে। এককোটি ইলেকট্রনের এককোটি শক্তিস্তর কিন্তু শক্তিস্তরগুলোর শক্তিমানের মধ্যে পার্থক্য অতি নগন্য। একারণে এককোটি শক্তিস্তরগুলোকে একটি ব্যান্ড কল্পনা করা হয়। এটাই শক্তি ব্যান্ড।
সংজ্ঞা: কোনো পদার্থের বিভিন্ন পরমাণুতে কিন্তু একই কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনগুলোর শক্তির সামান্য পার্থক্য থাকে। একই কক্ষপথে অবস্থিত এই সকল ইলেকট্রনের শক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানের মধ্যবর্তী পাল্লাকে শক্তি ব্যান্ড বলে।
২। যোজন ব্যান্ড, পরিবহন ব্যান্ড এবং নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড বলতে কী বুঝ?
যোজন ব্যান্ড: পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষপথকে যোজন স্তর বলে। যোজন স্তরে অবস্থিত সকল ইলেকট্রনের শক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানের মধ্যবর্তী পাল্লাকে যোজন ব্যান্ড বলে।
পরিবহন ব্যান্ড: যোজন স্তরে অবস্থিত সকল ইলেকট্রনের শক্তির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানের মধ্যবর্তী পাল্লাকে পরিবহন ব্যান্ড বলে।
নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড: পরিবহন ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ড এর মধ্যবর্তী শক্তির পাল্লাকে নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড বলে।
৩। পরিবাহী, অপরিবাহী এবং অর্ধপরিবাহী বলতে কী বুঝ? ব্যান্ডের তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা কর।
পরিবাহী (conductor): সাধারণভাবে যে সকল পদার্থের মধ্য তড়িৎ প্রবাহ হতে পারে তাদেরকে পরিবাহী পদার্থ বলে। ব্যান্ড তত্ত্ব অনুযায়ী- যে সকল পদার্থের পরিবহন ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ডের মাঝে কোনো শক্তির পার্থক্য থাকে না বরং কিছু অংশে এদের উপরিলেপন (overlap) ঘটে তাদেরকে পরিবাহী পদার্থ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
১। পরিবাহীর যোজন ব্যান্ড ফাঁকা থাকে কিন্তু পরিবহন ব্যান্ড ইলেকট্রন দ্বারা পূর্ণ থাকে।
২। ব্যান্ড গ্যাপ এনার্জি বা নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ডের মান শূন্য। পরিবহন এবং যোজন ব্যান্ডের কিছু অংশে উপরিলেপন (overlap) ঘটে।
৩। আপেক্ষিক রোধ কম হয় প্রায় 10^-8 Ωm ক্রমের। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়।
৪। পরিবাহীর দুই প্রান্তে সামান্য বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করা হলে মুক্ত ইলেকট্রনগুলো তড়িৎ প্রবাহের সৃষ্টি করে।
অপরিবাহী (insulator): সাধারণভাবে যে সকল পদার্থের মধ্য তড়িৎ প্রবাহ হতে পারে না তাদেরকে অপরিবাহী পদার্থ বলে। ব্যান্ড তত্ত্ব অনুযায়ী যে সকল পদার্থের পরিবহন ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ডের মাঝে শক্তির পার্থক্য অনেক বেশি থাকে তাদেরকে অপরিবাহী পদার্থ বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ
১। অপরিবাহীর যোজন ব্যান্ড ইলেকট্রন দ্বারা আংশিক পূর্ণ থাকে কিন্তু পরিবহন ব্যান্ড ফাঁকা থাকে।
২। ব্যান্ড গ্যাপ এনার্জি বা নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ডের মান 6eV থেকে 15eV এর মত।
৩। আপেক্ষিক রোধ কম হয় প্রায় 10^12 Ωm ক্রমের।
৪। পরিবাহীর দুই প্রান্তে যথেষ্ঠ বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করা হলেও ইলেকট্রন যোজন স্তর থেকে পরিবহন স্তরে প্রবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারে না। এ জন্য সাধারণ তাপমাত্রায় অপরিবাহীর ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চলে না।
অর্ধপরিবাহী (semiconductor): ব্যান্ড তত্ত্ব অনুযায়ী- যে সকল পদার্থের পরিবহন ব্যান্ড এবং যোজন ব্যান্ডের মাঝে কোনো শক্তির পার্থক্য অনেক কম থাকে (ব্যান্ড গ্যাপের মান 1.1 eV এর চেয়ে কম) তাদেরকে অর্ধপরিবাহী পদার্থ বলে।
বৈশিষ্ট্য:
১। অর্ধপরিবাহীর পরিবহন এবং যোজন ব্যান্ড উভয়ই ইলেকট্রন দ্বারা আংশিক পূর্ণ থাকে।
২। ব্যান্ড গ্যাপ এনার্জি বা নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ডের মান 1.1 eV এর চেয়ে কম হয়।
৩। আপেক্ষিক রোধ কম হয় প্রায় 10^-4 Ωm ক্রমের। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে অর্ধপরিবাহীর রোধ কমে যায়। ৪। পরম শূন্য (0K) তাপমাত্রায় যোজন ইলেকট্রনগুলো সমযোজী বন্ধন তৈরীতে ব্যস্ত থাকে, ফলে কোনো মুক্ত ইলেকট্রন থাকে না। ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ যোজন ব্যান্ড এবং ফাঁকা পরিবহন ব্যান্ডের মাঝে শক্তির পার্থক্য (এনার্জি গ্যাপ বা নিষিদ্ধ শক্তি ব্যান্ড) বেশি হয়। এ জন্য পরম শূন্য (0K) তাপমাত্রায় অর্ধপরিবাহী তড়িৎ পরিবহনে অংশ নেয় না। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে সমযোজী বন্ধন ভেঙে মুক্ত ইলেকট্রন সৃষ্টি হয় ফলে অর্ধপরিবাহীতে তখন তড়িৎ প্রবাহ চলে।
Leave a Reply