জানার আছে অনেক কিছু (আদর্শ গ্যাস)!!!
আদর্শ গ্যাস সংক্রান্ত জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের সহজ সমাধান।
(১) গ্যাস বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ পদার্থের একটি ভৌত অবস্থা হল গ্যাসীয় অবস্থা। সাধারণ তাপমাত্রা ও চাপে যে সকল পদার্থের স্ফুটনাংক কক্ষ তাপমাত্রার চেয়ে নিচে তাদের থেকে গ্যাস বলা হয়। গ্যাসের কোন নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন নেই।
অন্যভাবে বলা যায় কোন বায়বীয় পদার্থের তাপমাত্রা যদি সংকট তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয় তবে সেই পদার্থকে গ্যাস বলা হয়। সর্বোচ্চ যে তাপমাত্রায় থাকলে কোন গ্যাসকে শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগ করে তরলে পরিণত করা যায় তা ঐ গ্যাসের সংকট তাপমাত্রা বলে।
গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বল নগণ্য থাকে ফলে আন্তঃআণবিক দূরত্ব অনেক বেশি থাকে এ কারণে অণুগুলো পরস্পর থেকে মুক্ত থাকে এবং পাত্রের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে ফলে গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোন আকার বা আয়তন নেই। এ কারণে স্থির তাপমাত্রায় চাপের সামান্য পরিবর্তনে আয়তনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। আবার স্থির চাপে তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তনে গ্যাসের আয়তনও পরিবর্তিত হয়। এজন্য গ্যাসবা বায়বীয় পদার্থের ক্ষেত্রে চাপ ( ), পরম তাপমাত্রা এবং আয়তন কে গ্যাসের তিনটি চলরাশি বলে। যেকোনো দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হলে অপর আরেকটকে স্থির রাখতে হয়। উল্লেখ্য গ্যাসের আচরণ পর্যালোচনায় এই তিনটি রাশিরই উল্লেখ করতে হয়। গ্যাসের আচরণ পর্যালোচনায় বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম আদর্শ গ্যাস বিবেচনা করেন।
(২) আদর্শ গ্যাস কাকে বলে?
উত্তরঃ তাত্ত্বিকভাবে যেসব গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে গ্যাসসূত্রসমূহ এবং গ্যাসের গতি তত্ত্বের স্বীকার্যসমূহ পুরোপুরি মেনে চলে সেসব গ্যাস কে আদর্শ গ্যাস বলে।
(৩) বাস্তব গ্যাস কাকে বলে?
উত্তরঃ সাধারণভাবে কোন গ্যাসই সকল তাপমাত্রা বা চাপে বয়েলের সূত্র বা চার্লসের সূত্র মেনে চলে না; এ গ্যাসগুলোকে বাস্তব গ্যাস বলে। বাস্তব গ্যাস সমূহ নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রায় আদর্শ গ্যাসের মত আচরণ করে। বাস্তব ক্ষেত্রে আদর্শ গ্যাস পাওয়া সম্ভব নয় আদর্শ গ্যাস একটি কাল্পনিক ধারণা মাত্র।
(৪) আদর্শ গ্যাসের বৈশিষ্ট্য লিখ।
উত্তরঃ
(১) স্থির তাপমাত্রায় চাপ ও আয়তনের গুণফল একটি ধ্রুবক। যদি স্থির তাপমাত্রায় বনাম লেখচিত্র অঙ্কন করা হয় তবে তা অক্ষের সমান্তরাল একটি সরলরেখা হবে।
(২) চাপ অপরিবর্তিত রেখে গ্যাসের তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ২৭৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমালে গ্যাসের আয়তন শূন্য হবে।
(৩) গ্যাসটি যদি বাহ্যিক কাজ না করে প্রসারিত হয় তখন কোন তাপীয় পরিবর্তন হয় না।
(৪) স্থির তাপমাত্রায় আদর্শ গ্যাসের আয়তন পরিবর্তন হলেও অভ্যন্তরীণ শক্তি কোন পরিবর্তন হয় না। অর্থাৎ আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের পরিবর্তন,
(৫) আদর্শ গ্যাসের সূত্র সমুহ বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ
গ্যাসের তিনটি চলরাশি তাপমাত্রা চাপ এবং আয়তন এর যে কোন একটি স্থির রেখে অন্য দুটি রাশির মধ্যে সম্পর্ক যুক্ত সূত্রকে গ্যাসের সূত্র বলা হয়
গ্যাসের সূত্রগুলো হল-
(ক) বয়েলের সূত্র
(খ) চার্লসের সূত্র
(গ) চাপীয় সূত্র গ্যাস
(৬) বয়েলের সূত্রের বিবৃতি দাও।
উত্তরঃ বিবৃতিঃ স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন এর চাপের ব্যাস্তানুপাতিক।
(৭) চার্লসের সূত্রের বিবৃতি দাও।
চার্লসের সূত্রঃ স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন, প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য এর 0oC তাপমাত্রার আয়তনের 1/273 অংশ পরিবর্তিত হয়।
(৮) পরম শূন্য তাপমাত্রা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ স্থির চাপে একটি নির্দিষ্ট ভরের কোনো গ্যাসের তাপমাত্রা ক্রমশ কমাতে থাকলে, চার্লসের সূত্রানুযায়ী যে তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন তাত্ত্বিকভাবে শূন্য হয়ে ও গ্যাসের গতিশক্তি সম্পূর্ণরুপে লোপ পায় তাকে পরম শূন্য তাপমাত্রা বলে।
গ্যাসের পরম শুন্য তাপমাত্রা হল -273oC।
(৯) গ্যাসের গতিতত্ত্বের বিবৃতি দাও।
উত্তরঃ গ্যাস অণুসমূহের মধ্যে সংশক্তি বল নেই। একারণে গ্যাসের শক্তি বলতে অণুসমূহের গতিশক্তিকেই বুঝায়। গ্যাসের অণুসমূহ সর্বদা গতিশীল। গ্যাসের অণুসমূহের এই গতিশক্তি তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গ্যাসের অণুগুলোর গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
(১০) গ্যাসের গতিতত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্য সমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরঃ গ্যাসের গতিতত্ত্বের প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু পূর্বশর্তকে স্বীকার করে নিতে হয়। এই পূর্বশর্তগুলোকে গ্যাসের গতিতত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্য বলে। এই স্বীকার্যগুলো নিম্নে বর্ণিত হলঃ
- প্রত্যেক গ্যাসই সমান ভরের অসংখ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত। কণাগুলোকে গ্যাসের অণু বলে।
- গ্যাসের অণুসমূহ সর্বদা গতিশীল থাকে এবং এদের গতি নিউটনের গতিসূত্র মেনে চলে।
- আধারের আয়তনের তুলনায় গ্যাসীয় অণুগুলোর আয়তন অতি নগণ্য।
- গ্যাসের অণুসমূহ বিন্দুভর আদর্শ স্থিতিস্থাপক গোলকের ন্যায় আচরণ করে।
- গ্যাসের অণুসমূহের পরস্পরের মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই; আবদ্ধ পাত্রের দেয়ালের সাথেও অণুসমূহের কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই। অতএব অণুসমূহের শক্তি গতিশক্তি।
- অণূসমূহ সতত সঞ্চারণশীল।
- গ্যাসের অণুর বেগ শূন্য থেকে অসীম পর্যন্ত হতে পারে।
- গ্যাসের অণুসমূহ প্রতিনিয়ত একে অপরের সাথে ধাক্কা বা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পর পর দুটি ধাক্কার মধ্যবর্তী দূরত্ব গ্যাসের অণুসমূহ সমবেগে সরলপথে চলে। পর পর দুটি ধাক্কার মধ্যবর্তী দূরত্বকে মুক্ত পথ বলে।
- গ্যাসের আণবিক ঘনত্ব সবসময় একই থাকে।
(১১) মূল গড় বর্গবেগ কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো গ্যাসের সকল অণুর বেগের বর্গের গড় মানের বর্গমূলকে মূল গড় বর্গবেগ বলে।
মূল গড় বর্গবেগের সমীকরণ নিম্নরূপ-
(১২) গড় মুক্তপথ কাকে বলে?
উত্তরঃ কোনো অণু পরপর দুটি ধাক্কার মধ্যে গড়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে গড় মুক্তপথ বলে।
গড়মুক্তপথের ক্লসিয়াসের রাশিমালা নিম্নরূপ-
(১৩) গড় মুক্তপথ সম্পর্কিত সমীকরণগুলো লিখ।
গড়মুক্তপথের ক্লসিয়াসের রাশিমালা নিম্নরূপ-
বোল্টজম্যান সকল গড়বেগ সমান ধরে গড় মুক্তপথের নিমোক্ত সমীকরণটি দেন,
পরে ম্যাক্সওয়েল তার বেগ বন্টনের সূত্রের সাহায্যে গড় মুক্তপথের নিম্নোক্ত সমীকরণ নির্ণয় করেন,
গড় মুক্তপথের সমীকরণগুলোর মধ্যে সম্পর্ক,
(১৪) স্বাধীনতার মাত্রা বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ কোনো কণা বা কণা সিস্টেমের গতির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যার জন্য যে কয়টি স্বতন্ত্র চলকের প্রয়োজন হয় তাকে ঐ কণা বা কণা সিস্টেমের স্বাধীনতার মাত্রা বলে। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো বস্তুকণা স্বাধীনভাবে বা অবাধে যে কয় প্রকার গতির অধিকারী হতে পারে তার সংখ্যাকে স্বাধীনতার মাত্রা বলে।
ধরা যাক, বিশেষ কোনো রেখা বরাবর একটি কণার গতি বিদ্যামান। তাহলে একটি স্বাধীন চলক দ্বারা কণার ভৌত গতির ব্যাখ্যা প্রদান করা যাবে। সুতরাং এক্ষেত্রে স্বাধীনতার মাত্রা হবে এক। আবার যদি কণার গতি কোনো সমতলে অথবা ত্রি-মাত্রিক স্থানে সম্পাদন করলে স্বাধীনতার মাত্রা হবে যথাক্রমে দুই ও তিন।
কোনো দৃঢ় বস্তুর একই সাথে তিনটি রৈখিক গতির কারণে তিনটি স্বাধীনতার মাত্রা এবং তিনটি আবর্তন গতির কারণে আরও তিনিটি সহ মোট ছয়টি স্বাধীনতার মাত্রা থাকে।
স্বাধীনতার মাত্রা নির্ণয়ের সহজসূত্রঃ কোনো সিস্টেমের উপাদানগুলোর অবস্থান সম্পূর্ণরুপে প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থানাংকের মোট সংখ্যা হতে উপাদানগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে বর্তমান সম্পর্কসমূহের সংখ্যা বাদ দিলে ঐ সিস্টেমের স্বাধীনতার মাত্রা পাওয়া যায়।
(১৫) শক্তির সমবিভাজন নীতিটি বর্ণনা ও ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল দেখান যে, গতি সম্পাদনকালে সিস্টেমের অণুসমূহ যদি বলবিদ্যার সাধারণ সূত্রাবলী মেনে চলে তাহলে সিস্টেমের মোট শক্তি প্রতিটি স্বাধীনতার মাত্রা বরাবর সমভাবে বিভাজিত হয়। এটাকে শক্তির সমবিভাজন সূত্র বলে।
(১৬) সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ এবং অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বলতে কী বুঝ?
সম্পৃক্ত বাষ্প: নির্দিষ্ট মাত্রায় কোন আবদ্ধ স্থান সর্বাধিক যে পরিমাণ বাষ্প ধারণ করতে পারে সেই পরিমাণ বাষ্প সেখানে থাকলে ওই বাষ্প কে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে। আর সম্পৃক্ত বাষ্প যে চাপ দেয় তাকে সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বলে। অসম্পৃক্ত বাষ্প ও অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ: নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন আবদ্ধ স্থান সর্বাধিক যে পরিমাণ বাষ্প ধারণ করতে পারে তা অপেক্ষা কম বাষ্প থাকলে ওই বাষ্প কে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে অসম্পৃক্ত বাষ্প যে যা করে করে তাকে অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বলে।
(১৭) সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্পের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
উত্তরঃ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্পের নিম্নলিখিত ধর্মগুলো বিদ্যমানঃ
(১) স্থির তাপমাত্রায় আয়তন পরিবর্তন করলে অসম্পৃক্ত বাষ্পের ক্ষেত্রে চাপের পরিবর্তন হয় কিন্তু সম্পৃক্ত বাষ্পের ক্ষেত্রে স্থির তাপমাত্রায় আয়তন হ্রাস করলে কিছু বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং আয়তন বৃদ্ধি করলে কিছু তরল বের হয় কিন্তু সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ স্থির তাপমাত্রায় অসম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র মেনে চলে কিন্ত সম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র মেনে চলে না।
(২) আয়তন স্থির রেখে তাপমাত্রার পরিবর্তন করলে অসম্পৃক্ত বাষ্পের ক্ষেত্রে চাপের সূত্র অনুযায়ী চাপের পরিবর্তন হয় অর্থাৎ চাপ পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক সম্পৃক্ত বাষ্পের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বাড়ালে সম্পৃক্ত বাষ্প চাপ বাড়ে কিন্তু এটি কোন রৈখিক সূত্র মেনে চলে না কাজেই স্থির আয়তনে অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপের সূত্র মেনে চলে কিন্ত সম্পৃক্ত বাষ্প চাপের সূত্র মেনে চলে না
(৩) চাপ স্থির রেখে তাপমাত্রা পরিবর্তন করলে অসম্পৃক্ত বাষ্পের ক্ষেত্রে চার্লসের সূত্র অনুযায়ী আয়তনের পরিবর্তন হয় অর্থাৎ আয়তন পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক হয় কিন্তু চাপে রেখে বাঁশ ঢুকে বিভিন্ন তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত রাখা যায় না কাজেই স্থির চাপে অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপের সূত্র মেনে চলে কিন্ত সম্পৃক্ত বাষ্প চার্লসের সূত্র মেনে চলে না
(৪) চাপ বৃদ্ধি করে বা তাপমাত্রা হ্রাস করে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ অসম্পৃক্ত বাষ্প কে সম্পৃক্ত করা যায়
(১৮) শিশিরাঙ্ক বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ শিশিরাঙ্ক বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা তাপমাত্রা উপর নির্ভর করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে আবার তাপমাত্রা হ্রাস পেলে জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে বায়ুমণ্ডল জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হলে ওই বায়ুমণ্ডল আর জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না সাধারণত বায়ুমণ্ডলের যে জলীয় বাষ্প থাকে তার দ্বারা সে বায়ুমণ্ডল সম্পৃক্ত হয় না কিন্তু বায়ু ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকলে কোন এক তাপমাত্রায় মুক্ত জলীয়বাষ্প দ্বারাই বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং আর জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না তখন জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।
সংজ্ঞাঃ যে তাপমাত্রায় কোন নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু তার ভিতরের জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয় তাকে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে।
(১৯) আর্দ্রতা, পরম আর্দ্রতা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ
আর্দ্রতা বা হিউমিডিটিঃ কোন স্থানের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ আর্দ্রতা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে আর্দ্রতা বেশি হয় অর্থাৎ বায়ু ভেজা হয় এবং জলীয়বাষ্পের কম থাকলে বায়ুর আর্দ্রতা কম হয় অর্থাৎ বায়ু শুষ্ক হয়। আর্দ্রতাকে দুই ভাবে প্রকাশ করা যায় যথা-
(ক) পরম আর্দ্রতা
(খ) আপেক্ষিক আর্দ্রতা
(ক) পরম আর্দ্রতাঃ কোন সময় কোন স্থানের একক আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভরকে ঐ স্থানের পরম আর্দ্রতা বলে
(২০) আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলতে কী বুঝ?
উত্তরঃ কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ঘর এবং ওই একই তাপমাত্রায় বাইকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের ভোরের অনুপাতকে ঐ স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।
আপেক্ষিক আর্দ্রতার সমীকরণ নিম্নরূপ-
(২১) পরম আর্দ্রতা বৃদ্ধির সাথে গ্যাসীয় অনুর গড় বর্গবেগ ও বৃদ্ধি পায় কেন?
উত্তরঃ কোন সময় কোন স্থানের একক আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভরকে ওই স্থানের পরম আর্দ্রতা বলে। পরম আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে জলীয়বাষ্প বৃদ্ধি পায় এতে ঐ স্থানের অণু সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অণু সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এদের ছোট ছুটির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ফলে অনুর গড় বর্গবেগ ও বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ পরম আর্দ্রতা বৃদ্ধির সাথে গ্যাসীয় অণুর গড় বর্গবেগ বৃদ্ধি পায়।
(২২) হাইগ্রোমিটার কী? হাইগ্রোমিটারের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
উত্তরঃ বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয়ের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তাকে আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র বা হাইগ্রোমিটার বলে।
এদেরকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে ভাগ করা যায় যথা-
(ক) সিক্ত ও শুষ্ক বাল্ব হাইগ্রোমিটার
(খ) শিশিরাঙ্ক হাইগ্রোমিটার
(গ) রাসায়নিক হাইগ্রোমিটার
(ঘ) কেশ হাইগ্রোমিটার
(২৩) শুষ্ক এবং সিক্ত বাল্ব হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কিত ঘটনাবলী বর্ণনা কর।
উত্তরঃ শুষ্ক ও আর্দ্র বাল্ব থার্মোমিটার দুটির পাঠের পার্থক্য হতে আবহাওয়া সম্পর্কে নিম্নরূপ পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব।
(১) থার্মোমিটার দুটির পাঠের পার্থক্য বেশি হলে বুঝতে হবে বাড়িতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম অর্থাৎ আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।
(২) থার্মোমিটার দুটির পাঠের পার্থক্য কম হলে বুঝতে হবে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি অর্থাৎ আবহাওয়া আর্দ্র থাকবে।
(৩) থার্মোমিটার দুটির পাঠের পার্থক্য ধীরে ধীরে কমতে থাকলে বুঝতে হবে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৪) থার্মোমিটার দুটির পাঠের পার্থক্য হঠাৎ কমতে শুরু করলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে এবং ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
(৫) থার্মোমিটার দুটি পাঠের পার্থক্য না থাকলে বুঝতে হবে বাতাসে জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত আছে।
(২৪) একই তাপমাত্রায় ঢাকা অপেক্ষা কক্সবাজারে বেশি অস্বস্তিকর বোধ হয় কেন?
উত্তরঃ কক্সবাজার সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ায় সেখানকার বাতাসে অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প বিদ্যমান। এই জলীয় বাষ্প শরীরে লেগে ঘামের সৃষ্টি করে কারণ শরীরের তাপমাত্রা জলীয় বাষ্পের তাপমাত্রা অপেক্ষা কম ফলে ঘামের কারণে শরীর অস্বস্তি বোধ করে। অপরপক্ষে ঢাকা, সমুদ্র হতে অধিক দূরে অবস্থিত বলে এখানকার বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম। ফলে শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয় না তাই শরীরে অস্বস্তি বোধ হয় না।
(২৫) বর্ষাকাল অপেক্ষা শীতকালে ভেজা কাপড় দ্রুত শুকায় কেন?
উত্তরঃ বর্ষাকাল অপেক্ষা শীতকালে ভেজা কাপড় দ্রুত শুকায় কারণ- বর্ষার দিনে বায়ুমন্ডলে জলীয়বাষ্প তারা সম্পৃক্ত থাকে। ফলে বাতাস অধিক পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে না। শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে অর্থাৎ বাতাসের জলীয়বাষ্প কম থাকে। এই বাতাস ভেজা কাপড় থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে নিয়ে সম্পৃক্ত হতে চায়। ফলে শীতের দিনে ভেজা কাপড় দ্রুত শুকায়।
(২৬) শীতকালে ঠোঁট মুখ ফেটে যায় কেন?
উত্তরঃ শীতকালে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা কম থাকে অর্থাৎ বাতাসের জলীয়বাষ্প কম থাকে। এমন কি থাকে না বললেও চলে ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে সম্পৃক্ত হতে চায়। ফলে ঠোঁটে মুখের চামড়া শুষ্ক হয়ে চড়চড় করে এবং ফেটে যায়। এ জন্য গ্লিসারিন লাগিয়ে চামড়াকে ভেজা রাখতে হয়।
(২৭) মেঘহীন রাত্রিতে শিশির বেশি পড়ে কেন? অথবা আকাশ পরিষ্কার থাকলে শিশির বেশি পড়ে কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ দিনের বেলায় বায়ুর তাপমাত্রায় বায়ু অসম্পৃক্ত থাকে। রাতে ভূ-পৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয় এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ঠান্ডা হয় ফলে সেই বায়ু নিম্ন তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয় ও জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়েছে শিশির জমে। তাই মেঘহীন আকাশে রাতের বেলায় ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করতে পারে বলে তাপমাত্রা কমে শিশিরাংকে পৌছে। তখন বায়ু উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারাই সম্পৃক্ত হয় এবং শিশির পড়ে।
(২৮) গরমের দিনে কুকুর জিহ্বা বের করে দৌড়ায় কেন?
উত্তরঃ গরমের দিনে কুকুরের শরীর উত্তপ্ত থাকে এবং কুকুর অস্বস্তিবোধ করে। কিন্তু কুকুরের জিহ্বার ওপরে এক প্রকার লালা থাকে। সেই লালা কুকুরের শরীর থেকে বাষ্পীভবনের সুপ্ততাপ গ্রহণ করে বাষ্প হয়। কুকুরের শরীর তাপ হারায় ফলে কুকুরের শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয় এবং কুকুর স্বস্তিবোধ করে। একারণে গরমের দিনে কুকুর দিনে জিহ্বা বের করে দৌড়ায়।
(২৯) ঘরের মেঝেয় দেয়াল হঠাৎ ভিজে উঠে কেন?
উত্তরঃ তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। ঘরের ঠাণ্ডা মেঝে ও দেয়ালের সংস্পর্শে এসে গরম বাতাস ধীরে ধীরে কিছুটা ঠান্ডা হয়। ফলে গরম বাতাসের জলীয়বাষ্প বিন্দু বিন্দু পানির আকারে মেঝে ও দেয়ালে জমতে থাকায় তা ভিজে উঠে।
Leave a Reply