জানার আছে অনেক কিছু (চল তড়িৎ)!!!


চল তড়িৎ অধ্যায়ের জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের সহজ সমাধান দেখুন এখানেই।

১। তড়িৎ প্রবাহ কাকে বলে?

উত্তরঃ সাধারণভাবে তড়িৎ প্রবাহ বলতে ইলেকট্রনের প্রবাহকে বুঝায়। সংজ্ঞাঃ কোনো পরিবাহীর যে কোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে।

২। তড়িৎ প্রবাহের দিক আলোচনা কর।

উত্তরঃ তড়িৎ প্রবাহ মানে ইলেকট্রনের প্রবাহ। কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তকে একটি তড়িৎ উৎসের সাথে যুক্ত করলে পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ব্যাটারির ঋণাত্বক প্রান্ত থেকে ইলেকট্রন পরিবাহী তার বেয়ে ধনাত্বক প্রান্তের দিকে সঞ্চালিত হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তড়িৎ প্রবাহের দিক ধরা হয় ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিক অর্থাৎ ব্যাটারির ধনাত্বক প্রান্ত থেকে ঋণাত্বক প্রান্তের দিকে। কল্পনা করা হয় যে, ধনাত্বক চার্জ প্রবাহিত হয় ব্যাটারির ধনাত্বক প্রান্ত থেকে ঋণাত্বক প্রান্তের দিকে।

৩। রোধ কাকে বলে? তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায় কেন?

উত্তরঃ পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য তড়িৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় তাকে রোধ বলে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণঃ পরিবাহীর দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয়। ইলেকট্রন প্রবাহিত হওয়ার সময় ইলেকট্রন একে ওপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষ থেকেই পরিবাহীতে রোধের উৎপত্তি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে পরিবাহীর অণুগুলোর গতিশক্তি বেড়ে যায় ফলে অণুগুলোর কম্পনও বেড়ে যায়। অণুগুলোর কম্পন বেড়ে যাওয়ার কারণে ইলেকট্রনের মধ্যকার সংঘর্ষ পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পায় ফলে রোধ বৃদ্ধি পায়

৪। পরিবাহীর রোধ কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

উত্তরঃ পরিবাহীর রোধ নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর নির্ভর করে- পরিবাহীর দৈর্ঘ্য, পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, পরিবাহীর উপাদান, পরিবাহীর তাপমাত্রা

উপরের যে কোনো একটি বিষয়ের পরিবর্তন ঘটালে পরিবাহীর রোধের পরিবর্তন হয়।

৫। রোধের সূত্রগুলো বিবৃত ও ব্যাখ্যা  কর।

উত্তরঃ পরিবাহীর উপাদান এবং তাপমাত্রা স্থির থাকলে পরিবাহীর রোধ পরিবাহীর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে। এর ফলে রোধের সূত্র দুটি যা নিম্নরূপ- (ক) দৈর্ঘ্যের সূত্র

(খ) প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের সূত্র

দৈর্ঘ্যের সূত্রঃ স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট উপাদানের তৈরী কোনো পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল অপরিবর্তি থাকলে এর রোধ তার দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক।

প্রস্থচ্ছেদের সূত্রঃ স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট উপাদানের তৈরী কোনো পরিবাহীর দৈর্ঘ্য অপরিবর্তিত থাকলে এর রোধ তার প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের  ব্যাস্তানুপাতিক।

৬। আপেক্ষিক রোধ বলতে কী বুঝ?

সংজ্ঞাঃ 1m দৈর্ঘ্য এবং 1m2  প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট কোনো পরিবাহীর রোধকে ঐ পরিবাহীর উপাদানের আপেক্ষিক রোধ বলে।

৮। রোধের সমবায় কত প্রকার ও কী কী? তুল্য রোধের সংজ্ঞা দাও।

উত্তরঃ রোধের সমবায় তিন প্রকার। যথা- (১) শ্রেণি সমবায় (২) সমান্তরাল সমবায় এবং (৩) মিশ্র সমবায়

তুল্যরোধঃ রোধের কোনো সমবায়ে ব্যবহৃত রোধগুলোর পরিবর্তে যে মানের একটি মাত্র রোধ ব্যবহার করলে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহের কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে ঐ সমবায়ের তুল্য রোধ বলে।

৯। তড়িৎ কোষ কাকে বলে? কোষের তড়িচ্চালকশক্তি বলতে কী বুঝ?

উত্তরঃ তড়িৎ কোষঃ যে তড়িৎ যন্ত্র বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহ সরবরাহ করে তাকে তড়িৎ কোষ বলে। তড়িৎ কোষ রাসায়নিক শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রুপান্তর করে। 

তড়িচ্চালক শক্তিঃ এক কুলম্ব ধনাত্বক চার্জ বর্তনীর কোন বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে কোষ সমেত ঘুরিয়ে আবার ঐ বিন্দুতে নিয়ে আসতে যে পরিমাণ কাজ সম্পাদিত হয় তাকে কোষের তড়িচ্চালক শক্তি বলে।

১০। কির্শফের সূত্রদ্বয় বিবৃতি ও ব্যাখ্যা কর।

কির্শফের প্রথম সূত্রঃ বর্তনীর কোনো সংযোগ বিন্দুতে মিলিত প্রবাহগুলোর বীজগাণতিক সমষ্টি শুন্য। অর্থাৎ,

\large {\color{Blue} \sum I = 0}

কির্শফের দ্বিতীয় সূত্রঃ কোনো বদ্ধবর্তনী পরিভ্রমণকালে যে সকল বিভবপার্থক্যের সম্মুখীন হতে হয় তাদের বীজগাণিতিক সমষ্টি শূন্য।

অথবা, কোনো বদ্ধবর্তনীতে বিভবপার্থক্যগুলোর সমষ্টি কোষের তড়িচ্চালক শক্তির সমষ্টির সমান। ব্যাখ্যাঃ কোনো বদ্ধবর্তনীর যে কোনো একটি বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে আবার ঐ বিন্দুতে ফিরে আসাকে পরিভ্রমণ বলে। এরুপ বদ্ধবর্তনীকে একটি লুপ বলে। কোনো লুপে ভ্রমণের সময় কোনো রোধের মধ্যে দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ যে দিকে যাচ্ছে ভ্রমণের দিক সেইদিকে হলে রোধের দুই প্রান্তের বিভবপার্থক্যকে ধনাত্বক ধরতে হয়। অপরদিকে, ভ্রমণকালে কোষের ঋণাত্বক প্রান্ত আগে আসলে কোষের তড়িচ্চালক শক্তিকে ঋণাত্বক ধরতে হয়।

১১। হুইটস্টোন ব্রীজ বলতে কী? হুইটস্টোন ব্রীজের ভারসাম্য বা সাম্যাবস্থা বলতে কী বুঝ?

উত্তরঃ চারটি রোধ শ্রেণিবদ্ধভাবে যুক্ত করলে যে চারটি সংযোগস্থল তৈরি হয় তার যে কোনো দুটি সংযোগস্থলের মাঝে একটি গ্যালভানোমিটার এবং ওপর দুটি সংযোগস্থলের মাঝে একটি তড়িৎ কোষ সংযুক্ত করলে যে বর্তনী তৈরি হয় তাকে হুইটস্টোন ব্রীজ বলে।

হুইটস্টোন ব্রীজের ভারসাম্য অবস্থা বা সাম্যাবস্থাঃ B এবং D বিন্দুদ্বয়ের বিভব সমান হলে গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে কোনো তড়িৎ প্রবাহ ঘটে না। হুইটস্টোন ব্রীজের এই অবস্থাকে হুইটস্টোন ব্রীজের ভারসাম্য বা সাম্যাবস্থা বলে। হুইটস্টোন ব্রীজ সাম্যাবস্থায় থাকলে

\large {\color{Blue} {I_g} = 0} হয়।

১২। এক KWh বা এক ইউনিট কাকে বলে?

উত্তরঃ এক কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তড়িৎ যন্ত্র এক ঘণ্টা কাজ করলে যে শক্তি ব্যয় হয় তাকে এক KWh বা এক ইউনিট বলে।

১৩। জুলের তাপীয় ক্রিয়া কী? জুলের তাপীয় ক্রিয়ার উৎপন্ন তাপের সমীকরণগুলো নির্নয় কর।

উত্তরঃ কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত করার সময় এর রোধকে অতিক্রম করার জন্য কিছু শক্তি ব্যয় হয়, ব্যয়িত এই শক্তি তাপ শক্তিতে রুপান্তর হয়। এই ঘটনাকে জুলের তাপীয় ক্রিয়া বলে। কোনো পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে ব্যায়িত তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন তাপের সমানুপাতিক হয় অর্থাৎ,

\large {\color{Blue} W \propto H}

\large {\color{Blue} W = JH}

এখানে, J কে জুলের তাপীয় সমতা বলে।

জুলের তাপীয় ক্রিয়ার উৎপন্ন তাপের সমীকরণগুলো নিম্নরুপঃ 

\large {\color{Blue} H = Pt}

\large {\color{Blue} H = VIt}

\large {\color{Blue} H = {I^2}Rt}

\large {\color{Blue} H = \frac{{{V^2}}}{R}t}

১৪। জুলের তাপীয় ক্রিয়ার সূত্রগুলো বিবৃত কর।

প্রথম সূত্র(তড়িৎ প্রবাহের সূত্র):  কোনো পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা তড়িৎ প্রবাহের মানের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ,

\large {\color{Blue} H \propto {I^2}}  যখন,  R এবং t ধ্রব থাকে; 

দ্বিতীয় সূত্র (রোধের সূত্র): কোনো পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা পরিবাহীর রোধের সমানুপাতিক। অর্থাৎ

\large {\color{Blue} H \propto R} যখন, I এবং ধ্রব t থাকে; 

তৃতীয় সূত্র (সমহের সূত্র): কোনো পরিবাহীতে তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা সময়ের সমানুপাতিক।     অর্থাৎ,

\large {\color{Blue} H \propto t} যখন, I এবং R ধ্রব থাকে। 

১৫। শান্ট কাকে বলে?

উত্তরঃ গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে অধিক পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ যাতে গ্যালভানোমিটারকে নষ্ট না করে সেজন্য এর সাথে অতি অল্প মানের যে রোধ সমান্তরালে যুক্ত করা হয় তাকে শাণ্ট বলে। শান্টের কাজ হল তড়িৎ যন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published.